এই আর্টিকেলে আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি ও কি কারণে পুকুরে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে? সাধারণত মাছ চাষিরা পুকুরে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ পুকুরে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মাছের ফুলকা জনিত রোগ হয়ে থাকে। যার কারণে মাছ মারা গিয়ে পানির উপর ভেসে উঠে। মূলত পুকুরের পানিতে এ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পেলে এসব হয়ে থাকে। সাধারণত পুকুরে এ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পুকুরে গ্যাস হয়েছে বলা হয়। আর এ্যামোনিয়ার মাত্রা অধিক হারে বৃদ্ধি পেলে পুকুরের পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।
যখন পুকুরে পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় তখন মাছ ফুলকা পঁচা রোগে আক্রান্ত হয়। ফুলকা পঁচা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছ এক পর্যায়ে মারা যায়। ফুলকা পঁচা রোগ থেকে মাছকে রক্ষা করতে হলে পুকুরে অক্সিজেনের মাত্রা পর্যাপ্ত রাখতে হবে এবং পক্ষান্তরে পুকুরের পানিতে এ্যামোনিয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই পুকুরে গ্যাসের মাত্রা কেন বেশি হয় ও গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় কি।
পুকুরে গ্যাস হওয়ার কারণ কি
পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি জানার পূর্বে জেনে নিবো কি কারণে পুকুরে গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যায়। মূলত পুকুরে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানে হচ্ছে এ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পাওয়া। পুকুরের পানিতে এ্যামোনিয়া মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। আর অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে যখন এ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পায় তখন মাছের ফুলকা পঁচা রোগ হয়। মাছ ফুলকা পঁচা রোগে আক্রান্ত হয়ে মরতে শুরু করে। এই মরা মাছ তখন পুকুরের পানির উপর ভেসে উঠতে শুরু করে। যার কারণে মাছ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
পুকুরে গ্যাস বা এ্যামোনিয়া উৎসঃ
- সাধারণত মাছের দেহ থেকে এ্যামোনিয়া নির্গত হয়।
- মল মূত্র থেকে এ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয়।
- মাছের উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে এ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পায়।
- পুকুরে ব্যবহৃত ইউরিয়া সার থেকে এ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয়।
- বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে এ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ মরিচ গাছের ফুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার
পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি
এখন আলোচনা করবো পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি? পুকুরে এ্যামোনিয়া মাত্রা লিমিটের মধ্যে থাকলে মাছের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু যখন এ্যামোনিয়া মাত্রা অধিক পর্যায়ে বৃদ্ধি পায় তখন মাছ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই পুকুরের মাছ এসব রোগ থেকে রক্ষা করতে হলে পুকুরে এ্যামোনিয়া মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পুকুরের পানির অক্সিজের মাত্রা কমে যাবে। অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
পুকুরে গ্যাস হলে করণীয়ঃ
- পুকুরে প্রতি শতকের জন্য ৫০ গ্রাম টি.এস.পি ছিটাতে হবে। (টি.এস.পি থেকে এমোনিয়াম ফসফেট তৈরি হয় যা এ্যামোনিয়া মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে)
- প্রতি শতক পুকুরের জন্য ২০০ – ২৫০ গ্রাম লবণ ছিটাতে হবে। (পুকুরের গভীরতা ৬ ফুট হলে ২০০ গ্রাম এবং ৬ ফুট থেকে অধিক হলে প্রতি অতিরিক্ত ফুটের জন্য ৫০ গ্রাম লবণ বাড়াতে হবে)
- পকুরের প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম মোলাসেস অথবা ১০ – ২০ গ্রাম চিনি ২০ দিন পরপর ছিটাতে হবে।
- রাইস মিলের ছাই অথবা কাঠের ছাই প্রতি ৭ দিন পরপর ১ কেজি করে ছিটাতে হবে।
পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি
মাছ চাষ করে যেমন লাভবান হওয়া যায় তেমনি মাছ চাষের জন্য পর্যাপ্ত খাটুনি করতে হয়। এছাড়া মাছ চাষের পূর্বে পুকুর প্রস্তুতি করে নিতে হবে। পুকুরে মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে পুকুর প্রস্তুতি করে নিলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি পুকুর প্রস্তুতি ছাড়া পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া হয় তাহলে মাছের পোনা বেড়ে উঠতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া পুকুরে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেশি থাকলে মাছের পোনা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
তাই অবশ্যই পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য পুকুর প্রস্তুতি করে নিতে হবে। শুধু তাই নই উপরে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পুকুরে গ্যাস বা এ্যামোনিয়া বৃদ্ধির কারণ ও পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি সে বিষয়ে অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে। যদি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মাছ চাষ করা হয় তাহলে মাছ চাষে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।
সর্বশেষঃ উপরের আলোচিত বিষয় পুকুরে গ্যাস হলে করণীয় কি ও কি কারণে গ্যাস হতে পারে তা আপনার জন্য যথেষ্ট উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। এছাড়া পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে আপনার কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া ভালো সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়া আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।।