আমলকি সাধারণত মুখরোচক ফল হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু হয়তো অনেকে জানে না এই আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে উপকারি গুণ রয়েছে। যা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের উপকারিতা হয়ে থাকে। আমলকি মূলত টক স্বাদের ফল হয়ে থাকে। আমরা জানি যে, টক জাতীয় খাবারে বিটামিন-সি থাকে। আমলকিতেও প্রচুর পরিমাণে বিটামিন-সি রয়েছে। যা আমলকি খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। এক কথায় বলতে গেলে আমলকি একটি মুখরোচক বহুগুণে ভরা ফল। আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হবে আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
কিভাবে খেলে বেশি পরিমাণে আমলকির উপকারিতা পাওয়া সম্ভব সেই সাথে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং আমলকির ক্ষতিকর দিক সমূহও আলোচনা করা হবে। শুধু তাই নয় এই আর্টিকেলে আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তরভাবে আলোচনা করা হবে যা আপনারা সহজে বুঝতে পারবেন। যাইহোক, বেশি কথা না বাড়িয়ে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
আরো পড়ুনঃ
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
আমলকির প্রচুর গুণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন। নিয়মিত আমলকি চিবিয়ে খেলে সেই সকল উপকারিতা দ্রুত পাওয়া সম্ভব। আপনারা যদি আমলকি থেকে এসব উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাদেরকে আমলকি নিয়মিত খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। অনেকে হয়তো টক হওয়ার কারণে আমলকি খেতে চান না। তাদের অবশ্যই আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
প্রত্যেক জিনিসের উপকারিতার সাথে কিছু অপকারিতাও থাকে। এসব অপকারিতা হয় মূলত সঠিক ব্যবহার করতে না পারার কারণে। তেমনি আমলকি যদি বেশি উপকারিতা লাভের আশায় বেশি খাওয়া হয় তাহলে উপকারিতার বিপরীতে অপকারিতা হতে পারে। তাই আমাদেরকে সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে এসব উপকারিতা পাওয়া জন্য।
আমলকির উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ, তারুণ্য ধরে রাখা সহ বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা আমলকি থেকে পাওয়া যায়। আমলকিতে থাকে বিটামিন-এ, বিটামিন-বি, বিটামিন-সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ বিভিন্ন উপাদান। যা এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে থাকে। নিচে আমলকির উপকারিতা সমূহ দেয়া হল –
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- লিভার টক্সিন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- হৃদযন্ত্র কার্যক্ষমতা মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
- সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
- চুলের গোড়া মজবুত ও গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে।
- বয়স ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
আমলকির সেই সকল উপকারি গুণ পেতে হলে সঠিক নিয়মে খেতে হবে। তাই এই অনুচ্ছেদে আলোচনা হবে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে। আমলকির কার্যকরী গুণ পেতে হলে প্রতিদিন নিয়ম অনুসারে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টি কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খেলে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১ টি আমলকি খাবারের তরকারির সাথে মিশালে যথেষ্ট। তবে কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খেতে পারলে ভালো হয়।
আমলকির রসে যেহেতু উপকারি গুণ থাকে, তাই আমলকি জুস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন খাবারের আগে ৫-১০ মি.লি. আমলকির রস খেলে ভালো হয়। ব্লেন্ডারের সাহায্যে জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এসব নিয়ম অনুসরণ করে আমলকি নিয়মিত খেতে পারলে দ্রুত উপকারিতা পাওয়া যাবে।
আমলকির ক্ষতিকর দিক
আপনারা হয়তো বলতে পারেন আমলকির এত বেশি উপকারি গুণ থাকা সত্ত্বেও কেন ক্ষতিকর। আপনারা জানেন প্রত্যেক জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকও থাকে যদি সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয়। বিশেষ করে কোনো জিনিস পরিমাণের চাইতে বেশি খাওয়া কখনই ভালো হতে পারে না। ঠিক তেমনি আমলকির গুণগত মান পেতে হলে প্রতিদিন ২-৩ টি আমলকি খাওয়া যথেষ্ট। বেশি উপকারিতা পাওয়া আশায় কখনো বেশি খাওয়া যাবে না তা উপকারিতার উল্টো দিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আমলকির ক্ষতিকর দিক সমূহঃ
- আমলকিতে প্রচুর ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় আমলকি খাওয়াতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- আমলকি শরীরের তাপমাত্রা কমায়। তাই ঠান্ডা লাগা জনিত সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার সময় সাবধান হতে হবে।
- আমলকিতে প্রচুর এসিডের উপস্থিতি থাকায় হাইপার অ্যাসিডিটি সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- ডাইবেটিস ওষুধ খাওয়া চলাকালিন আমলকি খাওয়ার পূর্বে ডাক্টারের পরামর্শ নিতে হবে।
- নতুন অপারেশন করা রোগীদের আমলকি খাওয়া উচিত হবে না। যদি খাওয়ার ইচ্ছা হয় তবে ডাক্টারের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্বশেষঃ উপরের আলোচিত বিষয় থেকে আমলকির উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি আপনাদের কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়া আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো ও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।।