বাংলা সাহিত্য অনুরাগীদের মধ্যে বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের নাম শোনেননি এমন কেউ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখকদের মধ্যে একজন। তিনি মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক উপন্যাস তার হাতের লেখা। বাংলা সাহিত্যে অমূল্য অবদান রাখার কারণে তাকে সাহিত্যসম্রাট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। এই আর্টিকেলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস, জীবনী, কবিতা ও pdf বই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার কলাপাড়া গ্রামে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। পেশাগত কারণে তিনি বাংলার বিভিন্ন অংশে ভ্রমণের সুযোগ পান। ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু উপন্যাস লিখে ফেলেন। তার উপন্যাসগুলো মূলত গ্রামীণ সমাজকে নিয়ে লেখা। ১৮৯৮ সালে বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস আনন্দমঠে একটি কবিতা “বন্দে মাতরম”, যা ১৯৩৭ সালে ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এছাড়া তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্য আধুনিক উপন্যাসের লেখক ও সাহিত্য সম্রাট নামেও পরিচিতি পেয়েছেন। এছাড়া তিনি বঙ্গদর্শন নামক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অমূল্য অবদান রেখেছিল।
নিজের শুধু উপন্যাস রচনা করে গেছেন তা নয়। তিনি বেশকিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে “কমলাকান্তের দপ্তর” নামক প্রবন্ধ গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে যেন এক বিশেষ সংযোজন। মূলত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “কমলাকান্ত” ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করেছিলেন। এই ছদ্মনামে লেখা কিছু প্রবন্ধ তিনি একত্রে “কমলাকান্তের দপ্তর” নামে বইটিতে সংকলন করেন। পাঠকমহলে “কমলাকান্তের দপ্তর” বইটি তুমুল সফলতা পেয়েছিল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মূলত একজন ঔপন্যাসিক। তিনি মোট ১৫ টি উপন্যাস লিখেছেন। যার মধ্যে বাংলায় লিখেছেন ১৪ টি এবং একটি ইংরেজি উপন্যাস লিখেছেন। ইংরেজি উপন্যাসটির নাম হচ্ছে Rajmohan’s Wife.
১৮৬৮ সালের তিনি প্রকাশ করেন তার প্রথম উপন্যাস বিষবৃক্ষ। এটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক উপন্যাস বলা হয়ে থাকে। এর পূর্বেও বেশ কিছু উপন্যাস লেখার চেষ্টা হলেও সেগুলো সার্থক ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম সার্থক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে সংযোজন করেন।
বিষবৃক্ষ উপন্যাসটি ছিল মূলত বাংলা সাহিত্যের একটি অভূতপূর্ব মাইলফলক। কেননা উপন্যাস বিদেশি সাহিত্য বেশ পুরাতন হলেও বাংলা সাহিত্যে কিন্তু একেবারে নতুন। বাংলা সাহিত্যের শুরু থেকেই পদ্য আকারে সাহিত্য রচনা করা হত। এই একই ধারা বহু বছর চলে ধরে আসছিল। পরবর্তীতে তা গদ্য আকারে সাহিত্য রচনা শুরু হয়, যার শুরুটা উপন্যাস রচনার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
কপালকুণ্ডলা, বৃষবৃক্ষ, আনন্দমঠ ইত্যাদির মতো কালজয়ী উপন্যাস গুলো লিখেছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া মৃণালিনী, ইন্দিরা, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাধারানী, রজনী, সীতারাম, চন্দ্রশেখর, যুগলাঙ্গুরীয়, দেবী চৌধুরানী ও রামমোহন’স ওয়াইফ তার লেখা অন্যান্য উপন্যাস। এদের মধ্যে দেবী চৌধুরানী, আনন্দমঠ, সীতারাম এই তিনটি উপন্যাসকে ত্রয়ী উপন্যাস বলা হয়, কারণ এই তিনটি উপন্যাসে হচ্ছে সিক্যুয়াল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস pdf
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বইগুলো বর্তমানে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পেয়ে যাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বইগুলোর বাইন্ডিং ও পৃষ্ঠার মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যার কারণে অনেকেই বইগুলো পড়তে চান না। এই ভয়ে যে বইটি হয়তো ছেড়ে চলে যাবে।
আপনাদের জন্য সুখবর হচ্ছে যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলোর পিডিএফ এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আপনি খুব সহজে সামান্য কিছু এমবি খরচ করে বিনামূল্যেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলো পড়তে পারছেন।
আরও পড়ুনঃ
এছাড়া ইন্টারনেটে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলোর পিডিএফ লিংক একসাথে কোথাও পাবেন না বরং লিংকগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমরা আপনাদের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়েছি। আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে একসাথে সকল উপন্যাসগুলোর পিডিএফ পেয়ে যাবেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমূহের তালিকা–
- কপালকুণ্ডলা
- দুর্গেশনন্দিনী
- বিষবৃক্ষ
- আনন্দমঠ
- মৃণালিনী
- ইন্দিরা
- কৃষ্ণকান্তের উইল
- রাধারানী
- রজনী
- সীতারাম
- চন্দ্রশেখর
- রাজশেখর
- যুগলাঙ্গুরীয়
- দেবী চৌধুরানী
- রামমোহন’স ওয়াইফ
ডাউনলোড নোটিশঃ আপনি যদি মোবাইল ইউজার হয়ে থাকেন পিডিএফ বইগুলো ডাউনলোড করার জন্য আপনার ব্যবহৃত ব্রাউজারের পেইজটি ডেস্কটপ মোড করে নিতে হবে। অন্যতায় ডাউনলোড করতে পারবেন না শুধুমাত্র অনলাইনে পড়তে পারবেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কবিতা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখলেও মাত্র একটি কবিতার গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। কবিতা লেখায় তার আগ্রহ ছিল কম, বরং কবিতা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। অথচ আনন্দমঠ উপন্যাসে তার একটি ছোট্ট কবিতার অংশ “বান্দে মাতারাম” এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে তৎকালীন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এটিকে ভারতের জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানেও ভারত সরকার এই কবিতাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তার লেখা একমাত্র কবিতার বইটির নাম হচ্ছে কবিতাপুস্তক। এখানে শতাধিক কবিতা স্থান পেয়েছে। যদিও কবিতার বইটি তার অন্যান্য সাহিত্য রচনা মত অতটা বিখ্যাত হতে পারেনি, তবুও কবিতাগুলো অত্যন্ত সুখপাঠ্য।
আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্ব বিখ্যাত গল্পগুচ্ছ
একজন প্রকৃত সাহিত্য অনুরাগী অবশ্যই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলী সমাদরে গ্রহণ করবেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এমন এক সময়ে উপন্যাস রচনা করেছিলেন যখন উপন্যাস সাহিত্য ভিত্তিও নির্ধারণ হয়নি। এক্ষেত্রে তাকে বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের পথিকৃৎ বলাই চলে। তার লেখার স্টাইল বা শৈলীকে বলা হয় বঙ্কিম শৈলী। এই শৈলী অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সাহিত্যমান সর্বোৎকৃষ্ট হিসেবে সাহিত্য সমালোচকরা মেনে নিয়েছেন।
কপিরাইট নোটিশঃ আমরা কোনো ধরনের পিডিএফ বই / ফাইল তৈরি করি না। শুধুমাত্র আমাদের পাঠকদের সুবিধার জন্য সংগৃহীত পিডিএফ ফাইল শেয়ার করে থাকি। উক্ত শেয়ার করা পিডিএফ ফাইল যদি আপনি দাবী করে থাকেন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। দাবী প্রমাণিত হলে উক্ত পিডিএফ ফাইল ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের সাইট থেকে রিমুভ করা হবে।