ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। দেশের বাইরে থেকে অর্থ প্রেরণ কিংবা বাংলাদেশ থেকে ঘরে বসে বাইরের দেশে অর্থ প্রেরণ এছাড়া বাইরের দেশ থেকে রেমিন্টন্স লাভ করা এ ধরনের বেশ কিছু সুবিধা দিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অবলম্বন করে সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে। আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম। এবং এই নিয়ম চাইলে আপনি অনুসরণ করে সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
কিন্তু মাথায় রাখতে হবে কিছু কিছু উপায় রয়েছে যা অবলম্বন ব্যতীত কখনো ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যাবে না। তাহলে চলুন আর্টিকেলটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা জেনে নিব ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম এবং বিস্তারিত সকল তথ্য সম্বন্ধে। আপনাদের মধ্যে যারা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন এতে করে সম্পূর্ণ বিষয়গুলো এবং খুঁটিনাটি আপনাদের কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে প্রথম অবস্থাতেই আপনাকে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম জেনে নিতে হবে। কিন্তু এই নিয়ম শুরু করার জন্য আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে এর আগেই জেনে নিতে হবে। আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি লোন গ্রহণ করতে চান তাহলে পূর্বে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনি কোন ধরনের লোন নিতে চান।
আবার জেনে নিতে হবে এই ধরনের লোন আপনার জন্য কার্যকরী কিনা। এছাড়া এই ব্যাংকের লোন নেয়া জায়েজ কিনা। এছাড়াও এই ব্যাংকে লোন নেওয়ার সকল প্রসেস এবং সুদের রেট সমূহ। চলুন তাহলে এই সকল বিষয়গুলো আমরা জেনে নিব এর পরবর্তীতে আমরা এই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়মটি সম্পর্কে জেনে নিব।
ইসলামী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
ইসলামী ব্যাংক পার্সোনাল লোন হচ্ছে সবচাইতে জনপ্রিয় এবং বেশিরভাগ মানুষ পার্সোনাল কাজে বিভিন্ন ধরনের পার্সোনাল লোন নিয়ে থাকে। যেহেতু এটি খুবই জনপ্রিয় তাই এখানে সুদের রেট অনেক বেশি।
প্রতিটি ব্যাংকেই আমরা দেখেছি পার্সোনাল বোনের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট বাসুদের রেট অনেক বেশি হয়ে থাকে। এমনইভাবে ইসলামী ব্যাংক পার্সোনাল লোন আপনি যদি গ্রহণ করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে নিশ্চয়ই অনেক বেশি ইন্টারেস্ট দিতে হবে অন্যান্য সকল লোনের তুলনায়।
পার্সোনাল লোন তারাই নিবে যারা আসলে পার্সোনাল বিভিন্ন ধরনের কাজে বা খাতে এই ধরনের কাজে টাকা ব্যয় করতে চান। অর্থাৎ ধরুন আপনি অসুস্থ রয়েছেন চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে পারছেন না সে ক্ষেত্রে চাইলে ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি লোন নিতে পারেন পার্সোনাল এবং তারপর ইসলামী ব্যাংক পার্সোনাল লোনটি পরবর্তী সময়ে শোধ করে দিতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট
বর্তমান সময়ে ইসলামী ব্যাংক লোন রেট হল ৭.০৬ শতাংশ। তবে পরবর্তী সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় চাইলেই এই ইসলামী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে রাখতে পারে।
কিন্তু বাজেট ২০২৩ থেকে ২৪ অনুযায়ী অবশ্যই ইসলামী ব্যাংক লোন রেট সামান্য তারতম্য দেখা দিতে পারে। কেননা বর্তমান সময়ে বাজেট ২০২৩ থেকে ২৪ অনুযায়ী প্রত্যেকটি জিনিস এবং প্রত্যেকটি সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি লোনের ইন্টারেস্ট রেট কিংবা সুদের হার বৃদ্ধি পেতে পারে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি বর্তমানে সারাদেশে ইসলামী ব্যাংক লোন রেট রয়েছে ৭.০৬ শতাংশ এবং এটি নির্দিষ্ট এখনকার সময়। যেকোনো সময় চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার এই ইন্টারেস্ট রেট এর পরিমাণ বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে রাখতে পারে যেটা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আপনি যদি এই সময় দাঁড়িয়ে আজকে কিংবা কালকে লোন গ্রহণ করতে চান তাহলে নিশ্চয়ই ৭.০৬ শতাংশ আপনাকে দিতে হবে সুদ বা ইন্টারেস্ট। আর যদি আপনি এই কাজের সম্মত থেকে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবীদের লোন
একজন চাকরিজীবীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সেই সকল সমস্যার সমাধানে ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবীদের লোন দিয়ে থাকে। চাইলে এই লোন একজন চাকরিজীবী গ্রহণ করতে পারে এবং নিজের যে কোন সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারে।
সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বেতন ইসলামী ব্যাংকেই হতে হবে। অর্থাৎ আপনি যেহেতু আপনার চাকরির উপর ভিত্তি করে লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সেও তো অবশ্যই আপনাকে সেই চাকরির বেতন ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে হতে হবে। ধরুন আপনি সরকারি কর্মকর্তা আপনার বেতন আসে সোনালী ব্যাংকে। তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিরবিদের লোন গ্রহণ করতে পারবেন না।
কিন্তু আপনার যদি একইভাবে বেতন আসে ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে তাহলে আপনি সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের লোন গ্রহণ করতে পারেন। তাই যদি আপনার বেতন না হয়ে থাকে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে তাহলে অবশ্যই আপনাকে পূর্বেই সেটাই করে নিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন
আপনি যদি ব্যবসা শুরু করার জন্য লোন গ্রহণ করতে চান অর্থাৎ উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার জন্যেও লোনের ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে। সহজেই আপনি চাইলে ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে একটি লোন গ্রহণ করতে পারেন নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য।
এবং ইসলামী ব্যাংক অবশ্যই একজন ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বড় উদ্যোক্তা পর্যন্ত প্রত্যেককেই লোন দিতে রাজি রয়েছে। আর এই ধরনের লোন পেতে একজন সাধারন মানুষকে শুধুই মাত্র আবেদন কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।
কিন্তু তার জন্য অবশ্যই আপনাকে উপযোগী প্রার্থী হতে হবে তাহলে আপনি সহজেই ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন গ্রহণের যোগ্য হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি সকল ধরনের তথ্যগুলো ইসলামী ব্যাংকের এর কাছে জমা দিতে না পারেন কিংবা আপনি যদি যোগ্য না হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তা লোন গ্রহণের সুযোগ পাবেন না।
তাই শুরুতেই আপনাকে বেশ কিছু কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে। যার মধ্যে ব্যাংকের লোন নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল কাগজপত্র বাদেও দরকার হবে টিন সার্টিফিকেট। তাহলে আপনি যদি এ সকল ডকমেন্ট গুলো রেডি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই প্রস্তুত থাকুন ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন পেতে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ?
ইসলাম কখনোই সুদকে জায়েজ বলেনি। আর যেহেতু কোন ব্যাংক থেকে লোন নিলে আপনাকে দিতে হবে সুদ বা ইন্টারেস্ট তাহলে কিন্তু এই বিষয়টি ইসলাম কখনোই জায়েজ বলবে না। আমরা এমনটা বলছি না আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন না কিন্তু আমরা এটাও বলছি আমরা কখনোই সুদকে হালাল বলি না।
ইসলাম কখনোই কোথাও বলেনি যে আপনি সুদ নিতে পারবেন বা কাউকে দিতে পারবেন। আপনি যখন একটি ব্যাংক থেকে টাকা নেন সে সময় কিন্তু আপনাকে এক লক্ষ টাকা দিলে ব্যাংক পরবর্তী সময়ে এক লক্ষ নয় হাজার টাকা বা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আপনার কাছ থেকে নিবে। এই জায়গাতে আপনাকে অবশ্যই ২০ হাজার টাকা সুদ দিতে হচ্ছে।
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যদি কোন মূলধনের উপর টাকা কোন মানুষকে দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সেটি সুদ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ সহজ কথায় আপনি কারো থেকে টাকা ধার নিলেন এবং তার থেকে বেশি অর্থ অর্থাৎ যে টাকা ধার নিয়েছিলেন তার থেকে দুই গুণ কিংবা দেড় গুণ বেশি অর্থ প্রদান করলে সেটি সুদ হিসেবে গণ্য হবে।
আর ইসলামে সুদ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। জেনে বুঝে পাপ করা উচিত নয়। অর্থাৎ বলতে গেলে বর্তমান সময়ে লোন নেওয়ার সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
এখন বাকিটা আপনার উপর নির্ভর করছে যে আপনি নিতে চান নাকি ইসলামিক ভাবে নিজের জীবন পালন করতে চান।
Also Read:
- ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি, লোন সুবিধা ও সুদের হার
- সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম ও লোন ফরম
- কৃষি ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম, ইন্টারেস্ট রেট ইত্যাদি
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি
- ইসলামী ব্যাংক ডিপিএস খোলার নিয়ম ও লাভ-ক্ষতি
- কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি ও সুযোগ-সুবিধা
সর্বশেষঃ উক্ত আলোচনায় আমরা চেষ্টা করেছি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম আপনাদের সাথে আলোচনা করতে। আশা করছি আলোচনাটি সম্পন্ন ভাবে পড়লে আপনি সহজেই এই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু বিশেষ কথা হচ্ছে লোন নেওয়ার সম্পূর্ণ হারাম এবং আপনি যদি চেয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপার। এছাড়াও আমরা কখনোই লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে সমর্থন করব না কিংবা আপনার আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে সহযোগিতাও করবো না। তাই জেনে বুঝে বিচার বুদ্ধিতে আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন।
FAQs
ইসলামি ব্যাংক থেকে লোন নিতে কি কি লাগে?
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে, যেমন – জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, শিক্ষার সনদ, সম্পত্তির কাগজ, চাকরির কিংবা টিন সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে। এছাড়া যে ধরনের লোন নিতে চাইবেন, সে ধরনের লোন বিষয়ক আরো অন্যান্য ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে রাখা লাগবে যদি আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান।
ইসলামী ব্যাংক কিভাবে ঋণ দেয়?
ইসলামী ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংকের মতোই আপনার কাছ থেকে সাত দশমিক ০৬ শতাংশ ইন্টারেস্ট বা সুদ নিবে তারপরে আপনাকে লোন দিবে। বারো মাস। কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময় আপনাকে দেওয়া হবে এবং তারপর সেই সময়ের মধ্যে আপনাকে সেই ইন্টারেস্ট রেট শোধ করে দিতে হবে।