গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের মানুষজনের জন্য একটি আস্থা বহনকারী ব্যাংক। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবহার করে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে। প্রায় কয়েক যুগ আগে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশের এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমান সময়ে এই ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাংকগুলোর একটি। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলি এবং ইতিহাস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার করার চেষ্টা করবো। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাস সহ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত ধের্য্য ধরে সঙ্গে থাকুন।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলি
গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি করা হয়েছিল গরীব দুঃখীদের সহযোগিতা করার জন্য। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষকে গ্রামীণ ব্যাংক সহযোগিতা করেছে লোন দিয়ে। আবার কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদেরকে সহযোগিতা করেছে আরও বিভিন্ন উপায়ে। এছাড়া বর্তমান সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলি হিসেবে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি গঠন, বিনামূল্যে অর্থ দান সহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলছে।
আর যেহেতু এটি একটি বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান আর সেজন্য এদের রয়েছে হিউজ অ্যামাউন্ট এর টাকা। তাই বাংলাদেশের গরীব দুঃখীদের সহযোগিতা করার জন্য তারা অনেক বেশি আগ্রহী। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পারবো বাংলাদেশের যে সকল ব্যাংকগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নতি করেছে তার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক একটি। এই ব্যাংকটির গ্রাম গঞ্জের গরীব দুঃখী মানুষদের দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। স্বল্প বিনিয়োগে ভালো মানের অর্থ আয় করার সুযোগ প্রদান করছে গ্রামীণ ব্যাংক।
বলতে গেলে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলী অত্যন্ত বেশি। আর গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮%। যার মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে এবং খুব সহজে তাদেরকে আবারো তা ফেরত দিতে পারবে ৯৮ শতাংশ। এই গ্রুপের টার্গেট হচ্ছে গরীব মানুষদের সহযোগিতা করা এবং গরিব মহিলা পুরুষদের ব্যাংকিং সুবিধা পূরণ করা।
গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাস
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান ব্যক্তি যার নাম ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি এখন গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক নয় বাংলাদেশ সরকার দ্বারা বর্তমান সময়ে এই ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে। এবং তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকটি তৈরি করা হয়েছিল বাংলাদেশের ক্ষুদ্র আয়ের মানুষদের সহযোগিতা করার জন্য এবং সঠিকভাবে সেবা প্রদান করার জন্য। কিন্তু বর্তমান সময় তার সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আর এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নয় এটি বাংলাদেশের পাঁচটি ও তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম এবং সৃষ্ট অবস্থানে রয়েছে।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের সবচাইতে সেরা ব্যাংক হিসেবে এবং দরিদ্র বিমোচনের ভূমিকা পালন করার জন্য এই ব্যাংকটি অনেক বেশি পুরস্কার লাভ করেছিল। গ্রামীণ ব্যাংক এবং ডঃ মোঃ ইউনুস যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করে ২০০৬ সালে। তাছাড়াও ব্যাংকটি আরো বেশ কিছু পরিষ্কার অর্জন করেছিল যার শীর্ষে ভূমিকা পালন করেছে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। বর্তমান সময়ে এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং সঠিকভাবে বাংলাদেশ সরকার তা পরিচালনা করছে।
গ্রামীণ ব্যাংক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং বাংলাদেশ সরকার দ্বারা তা ভেরিফাইড হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। বাংলাদেশ সরকার বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রের মানুষজনের সহযোগিতার জন্য। এবং এই ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে গ্রামের মানুষদের অত্যন্ত উপকার হচ্ছে। গ্রামীণ মানুষজন এই ব্যাংকের সহায়তায় খুবই সহজে লোন গ্রহণ করতে পারছে এবং ৯৮ শতাংশ তাদেরকে পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে তারা উপকৃত হচ্ছে।
এই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ জনকে সহযোগিতা করা এবং দরিদ্র বিমোচন করা। যার মাধ্যমে কোন ধরনের সুখ ছাড়াই এই ব্যাংকটি ভালোভাবে লেনদেন করছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে এই ব্যাংকের মধ্যে ফান্ডিং, এবং আরো বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আশা করা যায় এই ব্যাংকের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করা হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
গ্রামীণ ব্যাংকের মূল প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে ডক্টর মহাম্মদ ইউনুস। এই ব্যাংকের পিছনে তার অনেক কৃতিত্ব রয়েছে। তিনি ছাড়া এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হতো না এবং বাংলাদেশের মানুষ এত সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারত না। তবে বর্তমান সময়ে এই ব্যাংকের মালিকানা তার কাছে নেই এটি সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই ব্যাংক বাংলাদেশের মানুষকে অত্যন্ত বেশি উপকার করছে। বলতে পারেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস আমাদের জন্য এমন একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে আমরা সঠিকভাবে লেনদেন করতে পারি এবং উপকৃত হতে পারি।
গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান কে?
গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমান সময়ে ডঃ মোঃ ইউনুস চালাচ্ছেন না তাহলে কে বর্তমান সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান। বর্তমান সময় গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হচ্ছে ডক্টর এ কে এম সাইফুল মজিদ। ১৬ মার্চ ২০২০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত বর্তমান সময়ে রয়েছে তিনি চেয়ারম্যান এবং আরও বেশ কিছু বছর তাকে চেয়ারম্যান পদে দেখা যাবে।
গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি না বেসরকারি?
গ্রামীণ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত হয় না। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-কানুনে আবদ্ধ নয়। গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে একটি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। যা কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। যে ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-কানুন মেনে পরিচালিত হয় না তাকে অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলা হয়। যদিও বর্তমানে ব্যাংকটি সরকারের নজরদারিতে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকটি এখনো সরকারি ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি ব্যাংক বলা যাবে না।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংকে অসংখ্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে যতগুলো ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। ব্যাংকটি শহর থেকে গ্রামীণ পর্যায় পর্যন্ত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রাখায় অনেকে গ্রামীণ ব্যাংকে বেশি পছন্দ করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা হিসেবে রয়েছে –
- দ্রুত সময়ের মধ্যে লোন পাওয়া যায়।
- ৯৮% লোন পরিশোধ করতে হয়।
- গ্রামের মানুষদের জন্য সবচাইতে স্থায়ী এবং আস্থা যুক্ত ব্যাংক।
- অনায়াসে এই ব্যাংকের সহায়তায় টাকা জমা করা যায়।
আরো রয়েছে আরো বেশ কিছু সুবিধা যা আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এবং দরিদ্র ও কৃষক মানুষজন এই ব্যাংকের সহায়তায় লোন নিয়ে নিজের জমি চাষ করতে পারছে কিংবা জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। তাছাড়াও অনেকেই রয়েছে যারা ছোটখাটো ব্যবসা করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের থেকে বর্তমান সময় লোন গ্রহণ করছে যার জমিতে বলতে পারেন গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি এবং এই ব্যাংক আমাদের জন্য খুবই জরুরী।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা
আমার মতে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি রয়েছে বর্তমানে গ্রামেগঞ্জে যে সকল মানুষজন রয়েছে তাদের জন্য। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই ব্যাংক আপনাকে যদি লোন প্রদান করে তাহলে সেই লোন আপনাকে ৯৮ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে যার ফলে আপনি কোন ধরনের সুদ দিচ্ছেন না। অর্থাৎ যে টাকা নিয়েছেন সেই টাকার ২% কম পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্রামের গঞ্জে যে সকল মানুষজন বসবাস করে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য বাজে কোন কাজে অনায়াসে লোন গ্রহণ করতে পারবে।
তাছাড়া বর্তমান সময়ে দরিদ্র মানুষদের লোন দেওয়া হয়ে থাকে না বিভিন্ন কারণে। সে ক্ষেত্রে বলতে গেলে বাংলাদেশ সরকার এই গ্রামীণ ব্যাংক এমনভাবে প্রস্তুত করেছে যাতে করে যে কোন দরিদ্র মানুষ এই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারে। বলতে পারেন বাংলাদেশ সরকারের এত বড় একটি উদ্যোগ এবং ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তায় যে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা গ্রামে গঞ্জের সকল মানুষের জন্য অনেক উপকারী।
Also Read:
- অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কিত তথ্য
- অগ্রণী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে যাবতীয় তথ্য
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দেখার নিয়ম
- ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি, লোন সুবিধা ও সুদের হার
- সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম ও লোন ফরম
- ইসলামী ব্যাংক ডিপিএস খোলার নিয়ম ও লাভ-ক্ষতি
দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্রাঞ্চ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায় রয়েছে। দরিদ্র বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম। আমি অনেকবার বলেছি গ্রামীণ ব্যাংক সহজে লোন প্রদান করে এবং সহজেই এই ব্যাংকের মাধ্যমে নিজের টাকা রেখে ডবল করা যায়। গরিব মানুষরা খুবই সহজে নিজের টাকা এই ব্যাংকে রেখে আবার তার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে পারে।
সুতরাং, পরিশেষে বলতে পারি এই ব্যাংক আমাদের জন্য খুবই জরুরী। গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের জন্য এতটাই জরুরী যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে এই ব্যাংকটি হোক এটাই আমরা প্রত্যাশা করব। বর্তমান সময়ে দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলি পরিচালিত হচ্ছে।