সিঙ্গাপুর বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। যার কারণে আমাদের অনেকের সিঙ্গাপুর সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে। তার জন্য আমরা অনেকে সিঙ্গাপুর সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করে থাকি। তাই আজকের এই আর্টিকেলে সিঙ্গাপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এবং সিঙ্গাপুরের আয়তন, রাজধানী, মুদ্রা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত ধর্য্য সহকারে সঙ্গে থাকতে হবে।
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেক ছোট্ট একটা দ্বীপ। আর এটার আয়তন হল ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার। মূলত এটাকে কোন রাষ্ট্র না বলে নগরই বলা চলে। তবুও এই দ্বীপটিই আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। কিন্তু আজ থেকে শুধুমাত্র ৬০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যায় ভিন্ন একটা দৃশ্য। সেই সময় কি রকমের ছিল সিঙ্গাপুর? ১৯৫৯ সালের সেই নগর রাষ্ট্রটিকে অপরাধ এবং দরিদ্রে জর্জরিত একটি বাণিজ্যকেন্দ্র বলা যায়। অনেক ছোট্ট একটি নগর এবং রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা উল্লেখ করার মতো। প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে তখনকার সময় তাদের কাছে কিছুই ছিল না, তখন তাদের পেশা–নেশা, বেঁচে থাকা সব কিছুর সঙ্গেই জড়িত ছিল ফিশিং। আর সেটা পরিচিত ছিল বেশিভাগ মাছ ধরার একটা কেন্দ্র হিসেবেই।
১৯৬৩ সালের ৩১ আগষ্ট বৃটিশরা সিঙ্গাপুরকে স্বাধীন করে দেয়। মূলত এর আগে বৃটিশের অধীনে নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন লি কুয়ান ইউ। বৃটিশরা লি কুয়ান ইউ’কে বুদ্ধি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য। কারণ এতে করে অনেক সুযোগ সুবিধা পাবে। লি কুয়ান মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য গনভোটের আয়োজন করেন ও মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলেন। বিপুল ভোটে জনগন রায় দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য।
১৯৬৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর মালয়শিয়ার সঙ্গে একসাথে যোগ দেন। আর তারপর থেকে মালয়েশিয়ার অংশ হয়ে যায়। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার অংশ হলেও মালয়েশিয়া এর যিনি সরকার রয়েছে তিনি সিঙ্গাপুরকে স্বদেশী ভাবতে পারেনি। তাই সিঙ্গাপুরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সিঙ্গাপুরে আবার চায়না, সাউথ ইন্ডিয়ান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার লোকজন নিয়ে তাদের জনসংখ্যা তৈরি হয়। এতে করে সিঙ্গাপুরের জনগনের মধ্যে একতা ও ভালোভাবে তৈরি হতে পারেনি। আবার তার মধ্যে দারিদ্র্যতা, ধর্মীয় দাঙ্গা নিয়ে হযবরল একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
সিঙ্গাপুর নিয়ে তখনকার সময়ের মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টেংকু আব্দুর রহমান পড়েছেন একটা ঝামেলার মধ্যে, তিনি আর সেটাকে সামলাতে পারেননি। এর জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া হাতে বের করে দিবেন। এর মানে হলো তোদের ঝামেলা তোরা সামলা। কিন্তু সিঙ্গাপুরের যে জনগণ রয়েছে তারা মূলত আলাদা হতে চান। ১৯৬৫ সালের ৬ই আগষ্ট সিঙ্গাপুরকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে মালয়েশিয়া হতে। সিঙ্গাপুর পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা স্বাধীনতা চায়নি।
৯ই আগষ্ট হৃদয় ভাঙ্গা এক বুক হাহাকার নিয়ে প্রেসিডেন্ট লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে।আড়াইশ বর্গ মাইলের ছোট্ট একটা দেশ, অশিক্ষিত মানুষ জনে ভরা, প্রাকৃতিক সম্পদ বলে কোন কিছু নেই, বিশাল পরিমাণে বেকার এক জনগোষ্ঠী, বেশিরভাগ লোক সাগর থেকে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশের মত মুক্তিযোদ্ধার কোন চেতনা ও নেই, চেতনা বেচে খাবে তারও কোন রকমের সুযোগ নেই। আমাদের মত গোঁফওয়ালা বুদ্ধিজীবীও নাই। কোথায় যাবে কি করবে? যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে। প্রেসিডেন্ট লি কুয়ান ইউ নিজে একাই চলা শুরু করে দিলেন।
সিঙ্গাপুরের রাজধানীর নাম কি?
সবাই কম বেশি সিঙ্গাপুরের নাম শুনেছেন, কিন্তু সিঙ্গাপুুরের রাজধানীর নাম কি তা অনেকে জানে না। মূলত যারা জানে না তাদের জন্য, সিঙ্গাপুর এর রাজধানীর নাম হচ্ছে সিঙ্গাপুর সিটি।
সিঙ্গাপুরের আয়তন কত?
সিঙ্গাপুর হচ্ছে একটা ক্ষুদ্র ও ব্যাপকভাবে নগরায়িত দ্বীপরাষ্ট্র। এটা মূলত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়াতে মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম প্রান্তে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মাঝখানে এটি অবস্থিত রয়েছে। ইউকিপিডিয়া তথ্য মতে, সিঙ্গাপুরের মোট আয়তন হচ্ছে ৭৩৪ বর্গকিলোমিটার।
সিঙ্গাপুরের মুদ্রার নাম কি?
প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে, ঠিক তেমনি সিঙ্গাপুরেরও নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। কিন্তু, সিঙ্গাপুরের মুদ্রার নাম কি? অর্থাৎ, সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কি? সিঙ্গাপুরের মুদ্রার নাম হচ্ছে সিঙ্গাপুরী ডলার।
সিঙ্গাপুর জনসংখ্যা কত?
সিঙ্গাপুরের আয়তনের পরিমাণ কম হলেও জনসংখ্যার পরিমাণ কিন্তু কম না! যা আয়তনের তুলনায় সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যার পরিমাণ ৬০ লক্ষের অধিক।
সিঙ্গাপুর কোন মহাদেশে অবস্থিত?
এশিয়া মহাদেশে যতগুলো ধনী রাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। যা আপনারা ইতিমধ্যে অনুমান করতে পেরেছেন সিঙ্গাপুর কোন মহাদেশে অবস্থিত। আবারো বলছি, সিঙ্গাপুর এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত।
সিঙ্গাপুরের ভাষার নাম কি?
সিঙ্গাপুরের ৪টি দাপ্তরিক ভাষা আছে। আর সেগুলো হল: ইংরেজি, মালয়, চীনা মান্দারিন ও তামিল। সাধারণ ভাষা হিসেবে এখানে ইংরেজি ভাষা বেশি পরিমাণে প্রচলিত।
সিঙ্গাপুর কোন ধর্মের দেশ?
বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ জনকে সিঙ্গাপুরের সব থেকে বেশি পরিমাণে দেখা গিয়েছে যেটা দেশের জনগণের প্রায় ৭০ শতাংশ। ২০২১ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান এটাই বলে দেয় যে সিঙ্গাপুরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীই বেশি পরিমাণে রয়েছে। এই বৌদ্ধদের প্রায় সকলেই চীনা বংশোদ্ভূত। বর্তমান সময়ে এখন সিঙ্গাপুরে বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সিঙ্গাপুরে মুসলিম জনসংখ্যা কত?
ইউকিপিডিয়া তথ্য মতে, জনসংখ্যার দিক দিয়ে সিঙ্গাপুরে মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ মোট ১৫.৬% রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ধর্ম পালনকারী জনসংখ্যা –
- বৌদ্ধ (৩১.১%)
- খ্রিস্টান (১৮.৯%)
- ইসলাম (১৫.৬%)
- তাওবাদ এবং অন্যান্য চীনা ধর্ম (৮.৮%)
- হিন্দু (৫%)
- শিখ ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্ম (০.৬%)
- নাস্টিক (২০%)
Also Read:
- ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলা সম্পর্কে জেনে নিন
- ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট চেক করার নিয়ম জানুন
- অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কিত তথ্য
- অগ্রণী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে যাবতীয় তথ্য
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি
- ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি, লোন সুবিধা ও সুদের হার
- সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম ও লোন ফরম
- ইসলামী ব্যাংক ডিপিএস খোলার নিয়ম ও লাভ-ক্ষতি
সিঙ্গাপুর কিসের জন্য বিখ্যাত?
আমরা অনেক সময় টেলিভিশন নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় সিঙ্গাপুর বিশ্বের মধ্যে বিখ্যাত হওয়া সম্পর্কে শুনে থাকি। কিন্তু, মূলত সিঙ্গাপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? সাধারণত সিঙ্গাপুরের মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিশ্ব জুড়ে অনেক খ্যাতী রয়েছে। যা বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক হিসেবে বিশ্বের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম। এছাড়া বড় বড় সংস্থার কার্যালয়, পরিচ্ছন্নতা ও উন্নত স্বাস্থ্যখাতের জন্য সিঙ্গাপুর বিখ্যাত।
শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি উৎসব, দর্শনীয় স্থান, স্থাপত্য ও খাবারের জন্য বিখ্যাত। এসবের জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে বিদেশী নাগরিক সিঙ্গাপুরে ভ্রমণের জন্য যায়।
সাধারণত সিঙ্গাপুর যেসব কারণে বিখ্যাত –
- উৎসব (মধ্য শরত উৎসব, চীনা নববর্ষ, বৌদ্ধ ভেসাক দিবস, হরি রায়া আদিলফিত্রী)
- দর্শনীয় স্থান (কাম্পং গ্ল্যাম, সেন্টোসা, লিটল ইন্ডিয়া, চায়নাটাউন, ক্লার্ক কোয়ে)
- স্থাপত্য (মেরলিয়ন পার্ক, মারিনা বে স্যান্ডস্, ইউনিভার্সাল স্টুডিও এবং SEA অ্যাকোয়ারিয়াম, শিল্প ও বিজ্ঞান যাদুঘর, ফোর্ট সিলোসো)
- খাবার (চিলি ক্র্যাব, ফিশ হেড কারি, লাকসা নুডল স্যুপ)
সর্বশেষঃ আজকের এই আর্টিকেলের সাহায্যে সিঙ্গাপুরের ইতিহাস, আয়তন, রাজধানী, মুদ্রা, জনসংখ্যা, ধর্ম ও সিঙ্গাপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ ধরনের তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।।